মোবাইল ফোন কি? মোবাইল ফোনের জনক, বৈশিষ্ট্য, সুবিধা ও অসুবিধা

মোবাইল ফোন (Mobile Phone)

মোবাইল ফোন কি? (What is a Mobile Phone?)

মোবাইল মানব জীবনে একটি অতিপ্রয়োজনীয় যন্ত্র। এটি একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস যা মানব জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সকালে ঘুম থেকে উঠেই আমরা প্রথমে দেখি কয়টা বাজে। একটা সময় দেয়াল ঘড়ি বা হাত ঘড়িতে সময় দেখা লাগতো। তবে, আধুনিক মোবাইলের কল্যাণে এখন কমদামি মোবাইলেও সময় দেখা যায়। এছাড়া, মোবাইল ফোনে ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা, গান শোনা, গেমস খেলা, ছবি দেখা, ছবি তোলা ইত্যাদি বড় বড় যন্ত্রের কাজ এখন একটি মোবাইল ফোন দিয়েই করা যাচ্ছে।

 

মোবাইল ফোন কাকে বলে?

মোবাইল ফোন হলো একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস (electronic device) যা বেস স্টেশনের একটি সেলুলার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ফুল ডুপের দ্বিমুখী রেডিও টেলিকমিউনিকেশন্সকে ব্যবহার করে থাকে। এর মাধ্যমে যে কোন ভৌগলিক অবস্থানে থাকা দুই ব্যক্তি একে অপরের সাথে টেলিকমিউনিকেশন ডিভাইসের মাধ্যমে ভয়েস এবং টেক্সট মেসেজ আদান-প্রদান করতে পারে।

মোবাইল ফোন হাতের মধ্যে বা সহজে বহন করা যায়। তাই মোবাইল ফোনকে সেল ফোন, সেলুলার ফোন, হ্যান্ডফোন, মুঠোফোন  নামেও ডাকা হয়। মোবাইল শব্দের অর্থ হলো ভ্রাম্যমান বা স্থানান্তরযোগ্য। মোবাইল ফোন ওজনে হালকা হওয়ায় সহজে যেকোন স্থানে নিয়ে ব্যবহার করা যায়। যার ফলে একে মোবাইল ফোন বলা হয়।

 

আরও পড়ুন:

ইন্টারনেট কাকে বলে? ইন্টারনেট কত প্রকার? সুবিধা ও অসুবিধা

কম্পিউটার কাকে বলে? কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য, প্রকারভেদ ও ব্যবহার

কৃত্রিম উপগ্রহ কি বা কাকে বলে? কৃত্রিম উপগ্রহের প্রকারভেদ ও ব্যবহার

 

মোবাইল কত সালে কে আবিষ্কার করেন?

আপনাদের অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে, মোবাইল ফোনের জনক কে? বা মোবাইল ফোন কে আবিষ্কার করেন? অথবা মোবাফল ফোন কত সালে আবিষ্কার করা হয় ইত্যাদি। আসুন এ বিষয়টি এবার পরিষ্কার করা যাক..

মোবাইল ফোন তারবিহীন টেলিফোন বিশেষ। যার অর্থ ভ্রাম্যমাণ বা স্থানান্তরযোগ্য। ১৯৭৩ সালের ৪ এপ্রিল মার্টিন কুপার প্রথম মোবাইল ফোন আবিষ্কার করেন। এসময় তিনি মটোরোলা (Motorola) কোম্পানিতে কর্মরত ছিলেন। মার্টিন কুপার কে মোবাইল ফোনের আবিষ্কারক বা জনক বলে অভিহিত করা হয়।

মোবাইল বা সেলুলার টেলিফোন ইউনিটে মূল ৩টি অংশ রয়েছে। সেগুলো হলো-
১. একটি কন্ট্রোল ইউনিট (Control Unit).
২. একটি ট্রান্সিভার (Transceiver).
৩. একটি এন্টেনা সিস্টেম (Antenna System).

এই তিনটি মূল অংশ ছাড়াও মোবাইল ফোনে আরও কিছু উপাদান থাকে। সেগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো-

  • মোবাইলে এক বা একাধিক ব্যাটারি থাকে। যা দিয়ে মোবাইলের সার্বিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করে। ব্যাটারির ক্ষমতা Ah (অ্যাম্পিয়ার-ঘণ্টা) এর মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়।
  • একটি ইনপুট মেকানিজম যা ফোন সিস্টেমের সাথে যোগাযোগ করতে ব্যবহারকারীদের সহায়তা করে। সবচেয়ে সাধারণ ইনপুট মেকানিজম হচ্ছে কী প্যাড। তবে কিছু স্মার্টফোনে টাচস্ক্রিন রয়েছে।
  • ব্যবহারকারীকে জিএসএম মোবাইল ফোনের সার্ভিস প্রোভাইডার একটি SIM (Subscriber Identity Module) কার্ড সরবরাহ করে। সিডিএমএ ডিভাইসে একই ধরনের কার্ড রয়েছে যাকে R-UIM (Removable User Identity Module) বলা হয়।

মোবাইল ফোন এর বৈশিষ্ট্য (Features of Mobile Phone)

  • সকল GSM (Global System for Mobile Communication) ফোনে এক বা একাধিক সিম কার্ড ব্যবহার করা হয়। এগুলোর সিম কার্ড দেখতে অনেকটা ছোট ডাক-টিকেটের মত। সাধারণত মোবাইল ফোনের ব্যাটারি নিচে অথবা মোবাইলের একপাশে এটি স্থাপন করতে হয়।
  • সকল ব্যবহারকারী মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কথা বলতে পারে ও মেসেজে তথ্য আদান প্রদান করতে হবে।
  • সকল মোবাইল ফোনের মধ্যে এক বা একাধিক ব্যাটারি থাকে যা ফোনের মধ্যে পাওয়ার বা বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। মোবাইলের ব্যাটারির চার্জ শেষ হয়ে গেলে আবার চার্জ করা যায়।
  • সকল মোবাইল ফোনের মধ্যে IMEI (International Mobile Equipment Identity) নম্বর থাকে। কোন কারণে মোবাইল ফোন হারিয়ে গেলে বা চুরি হয়ে গেলে এর মাধ্যমে পুনরুদ্ধার করা যায়।
  • মোবাইলের কি-প্যাড ব্যবহার করে ইনপুট এর কাজ করা হয়। তবে, আধুনিক স্মার্টফোনে টাচ স্ক্রিন ব্যবহার করে ইনপুট করা যায়।
  • সকল মোবাইলের একটি একক IMSI (International Mobile Subscriber Identity) নম্বর থাকে।

 

আরও পড়ুন:

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কাকে বলে? তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সুফল ও কুফল  

ইউনিকোড কি? ইউনিকোড প্রতিষ্টার কারন এবং সুবিধা সমূহ

ভিডিও কনফারেন্সিং কি? ভিডিও কনফারেন্সিং এর সুবিধা

 

এন্ড্রয়েড মোবাইলের উপকারিতা বা গুরুত্ব

আধুনিক সমাজ ব্যবস্থায় মোবাইলের গুরুত্ব দিন দিন বেড়েই চলেছে। মোবাইল ফোন ছাড়া কোন মানুষ চলতে পারেনা। বর্তমানে প্রায় প্রতিটি প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষেরর মোবাইল ফোন রয়েছে। বিজ্ঞানীদের আবিষ্কার করা অনেক যন্ত্রের মাধ্যমে একটি কাজ করা গেলেও মোবাইল দিযে বহুমুখী করা যায়। এখন কম্পিউটারের বিকল্প হিসাবেও মোবাইল ব্যবহার করা হচ্ছে। আকারে ছোট ও ওজনে কম হওয়ায় সহজে বহন করা যায়। মোবাইলের মাধ্যমে ঘরে বসে অনেক কাজ করা যায়। দেশ বিদেশে কথা বলা বা যোগাযোগ করা যায়। এর ফলে মানুষের বৈশ্বিক দূরত্ব কমে এসেছে।

মোবাইল কম্পানিগুলোর স্মার্টফোন বাজারজাত মানুষের জীবনকে আরও সহজ করে দিয়েছে। এখন মানুষ একটি মোবাইল দিয়ে ছবি তুলা, ছবি দেখা, অনলাইনে মিটিং করা, ঘরে বসে স্কুল কলেজের ক্লাস করা, ইমেইল প্রেরণ ও গ্রহণ, SMS এর মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদান, বিদেশে না গিয়ে চিকিৎসা সেবা নেওয়া ইত্যাদি নানা কাজে স্মার্টফোন ব্যবহার করা হচ্ছে।

 

মোবাইল ফোনের সুবিধা (Advantages of mobile phones)

  • সহজেই দেশ-বিদেশে একে অপরের সাথে যোগাযোগ করা যায়।
  • স্থান পরিবর্তন হলেও নিরবচ্ছিন্ন সংযোগ থাকে।
  • একই ফোনে একাধিক সিম ব্যবহার করা যায়। ব্যবহারকারী যে সিম দিয়ে কথা বলে সুবিধা পায় সেই সিম ব্যবহার করতে পারে।
  • ওজনে কম হওয়ায় পকেটে বা ব্যাগে করে সব জায়গায় নিয়ে যাওয়া যায়।
  • স্থির বা ভিডিও চিত্র ধারণ, অডিও-ভিডিও কিংবা রেডিও-টিভির ব্যবহার করা যায়।
  • দ্রুত তথ্য আদান-প্রদান করা যায়।
  • ইন্টারনেট ব্রাউজ করা যায়।
  • মোবাইল কল আসলে কল ডাইভার্ট, হোল্ড রাখা অথবা বাতিল করা যায়।
  • SMS ও MMS সার্ভিস আদান-প্রদান করা যায়।
  • সহজে ই-মেইল প্রেরণ ও গ্রহণ করা যায়।
  • টাচ স্ক্রীন ও হাতের লেখা সনাক্ত করা যায়।
  • Global Positioning System (GPS) এর ফলে কল ট্র্যাকিং বা ব্যবহারকারী ও তার অবস্থান সনাক্ত করা যায়।
  • Bluetooth, Infrared প্রভৃতি ওয়্যারলেস সিস্টেমের ব্যবহার করা যায়।

 

অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিক্ষার্থীরা মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে
অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিক্ষার্থীরা মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে

মোবাইল ফোন ব্যবহারের অসুবিধা (Disadvantages of using mobile phones)

  • তরুণ ও শিশুরা মোবাইলের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয়ে যাওয়ার ফলে লেখাপড়ার ক্ষতি হচ্ছে।
  • মোবাইল নেটওয়ার্ক মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এছাড়া, অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহার করলে শরীরে নানা উপসর্গ দেখা যায়।
  • সহজে এর মাধ্যমে অনেকে প্রতারণার আশ্রয় নিতে পারে।

##########

Back to top button